একাডেমিক লেখালেখি যেভাবে শুরু করবেন…

      Comments Off on একাডেমিক লেখালেখি যেভাবে শুরু করবেন…

স্নাতক-পর্যায়ে অনেকেই ঠিক বুঝে উঠতে পারে না একাডেমিক লেখালেখি কিভাবে শুরু করবে। এ বিষয়ে নূতনদের জন্য কিছু প্রাথমিক নির্দেশনাঃ

লেখার টপিক/থিম ন্যারো ডাউন করাঃ

প্রথমেই আপনাকে চিন্তা করতে হবে আপনি ঠিক কোন বিষয়টির ওপর লিখতে চান। একটি অতিকায় বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করাই শ্রেয়। আপনার লেখার/আলোচনার বিষয়বস্তু যতটা স্পেসিফিক হবে, লেখার গ্রহণযোগ্যতা তত বাড়বে। যেমন- আপনি শিশু অধিকার (চাইল্ড রাইট) নিয়ে লিখতে চান, যা নিঃসন্দেহে অনেক বিশাল টপিক। তাই এক্ষেত্রে আপনি টপিক ন্যারো ডাউন করলেন ‘বাংলাদেশে শিশুদের অধিকার’ কিংবা ‘বাংলাদেশের পথ শিশুদের অধিকার’ (আরও স্পেসিফিক)। যদি কিঞ্চিৎ ন্যারো করি তবে দাঁড়ায় ‘ পথ শিশুদের অধিকার ও তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সংক্রান্ত ঢাকা জেলার ২০১৫-১৭ সালের সকল কেস/ঘটনা আপনি পর্যালোচনা করতে চান। কিংবা আরো স্পেসিফিক।

বিষয়টি নিয়ে পর্যাপ্ত পড়াশুনা করাঃ

এই কৌশলটি সকল ধরনের লেখালেখির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যে, আপনি যে বিষয়টি নিয়ে লিখতে চান সেটি নিয়ে আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমানে পড়তে ও অনুধাবন করতে হবে। নতুবা আপনার লেখা/আলোচনা ‘Re-invention of the Wheels’ হয়ে যেতে পারে যা পন্ডশ্রম ছাড়া কিছুই হবে না। লিটারেচার পড়ে লেখার মধ্যে গ্যাপ খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে হবে।

লেখার অব্জেকটিভ ঠিক করাঃ

লেখার অব্জেকটিভ মানে হলো- লেখার মাধ্যমে আপনি কি দেখাতে বা প্রমাণ করতে চান। আপনার লেখার এক বা একাধিক সুনির্দিষ্ট অব্জেকটিভ যদি আপনি ঠিক করে তারপর লিখতে বসেন তবে দেখবেন আপনার পা পিছলে পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকবে না।

রেফারেন্সঃ

যে কোন তথ্য, কারো উক্তি বা ধারণা যদি আপনি আপনার লেখায় ব্যবহার করতে চান তবে অবশ্যই রেফারেন্স দিতে হবে। রেফারেন্স হতে হবে সত্য, নির্ভুল, নির্ভরযোগ্য ও প্রাসংগিক। তবে মনে রাখবেন, রেফারেন্স ব্যবহার করলে আপনার লেখার Authenticity ও Credibility দুটোই বেড়ে যাবে যা লেখাটির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে।

সংক্ষিপ্ততা ও প্রাসংগিকতাঃ

অনেক সময় লিখতে লিখতে লেখা এত বেশি দীর্ঘ ও অপ্রাসংগিক হয়ে যায় যে ব্যাপারটা ‘Eating Soup with a Knife’ হয়ে যায়। তাই সহজ-সরল ও সংক্ষিপ্ত আলোচনাই শ্রেয়।

ভাষাঃ

অবশেষে ভাষা বা লেখার মাধ্যম নিয়ে একটি কথা। চেষ্টা করুন ইংরেজিতে লিখতে, যেহেতু একাডেমিক লেখা লিখবেন আর আপনাকে এ বিষয়ে কোনো লিটারেচার পড়তে হলেও ইংরেজিতেই পড়তে হবে (বেশির ভাগ সময়ে)। তাছাড়া, ইংরেজিতে লিখলে আপনার লেখাটি সহজেই দেশের বাইরে ঘুরতে যেতে পারবে।

এক বড় অশুভ সময় এসেছে পৃথিবীতে, যারা অন্ধ তারা চোখে সবচেয়ে বেশি বেশি দেখতে পাচ্ছে এবং ভুল-ভ্রান্তি ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। তাদের থেকে নিজের সত্ত্বাকে উন্নত করবার একটি উপায় সঠিকটুকু জানা এবং অপরকে ভালো কিছু সম্বন্ধে জানানো, তা অবশ্যই হতে পারে আপনার লেখালেখির মাধ্যমে। সকলের লেখালেখির জন্য শুভ কামনা।

নাসরিন জেবিন, সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ।